আমরা বলেছি যে সমত্বরণের একটি চমকপ্রদ উদাহরণ হচ্ছে মাধ্যাকর্ষণজনিত ত্বরণ g, এর প্রভাবে যেকোনো বস্তু উপর থেকে ছেড়ে দিলে এটি গতিশীল হয়ে নিচের দিকে নামতে থাকে। এ ধরনের পড়ন্ত বস্তু দেখে গ্যালিলিও তিনটি সূত্র বের করেন। সূত্রগুলো স্থির অবস্থা থেকে মুক্তভাবে পড়তে থাকা বস্তুর বেলায় ব্যবহার করা যায়। সূত্রগুলো হচ্ছে:
প্রথম সূত্র: স্থির অবস্থান ও একই উচ্চতা থেকে বিনা বাধায় পড়ন্ত বস্তু সমান সময়ে সমান পথ অতিক্রম করবে।
দ্বিতীয় সূত্র: স্থির অবস্থান থেকে বিনা বাধায় পড়ন্ত বস্তুর নির্দিষ্ট সময়ে (t) প্রাপ্ত বেগ (v) ঐ সময়ের সমানুপাতিক। অর্থাৎ
তৃতীয় সূত্র: স্থির অবস্থান থেকে বিনা বাধায় পড়ন্ত বস্তু নির্দিষ্ট সময়ে যে দূরত্ব (h) অতিক্রম করে তা সময়ের (t) বর্গের সমানুপাতিক। অর্থাৎ
আমরা সমত্বরণের উদাহরণ হিসেবে g বা মাধ্যাকর্ষণজনিত ত্বরণের কথা বলেছিলাম। গতি সম্পর্কে আমরা যে সমীকরণগুলো বের করেছি সেগুলোকে খুব সহজেই আমরা পড়ন্ত বস্তুর গতি ব্যবহার করার জন্য বের করতে পারি। অতিক্রান্ত দূরত্বের বেলায় s ব্যবহার করা হয়েছিল, এবারে উচ্চতা বোঝানোর জন্য h ব্যবহার করব, ত্বরণের জন্য a না লিখে g লিখব , শুধু এ দুটোই হবে পার্থক্য
গ্যালিলিওর পড়ন্ত বস্তুর যে তিনটি সূত্র আছে সেগুলো আসলে এই সূত্রগুলো ছাড়া আর কিছু নয়।
প্রথম সূত্রটি বলছে যে একই উচ্চতা থেকে ছেড়ে দেওয়া হলে যেকোনো বস্তু একই সময়ে নিচে পড়বে অর্থাৎ এটি বস্তুর ভরের উপর নির্ভর করবে না। এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতার সাথে খাপ খায় না। এক টুকরো কাগজ আর একটি ছোট পাথর উপর থেকে ছেড়ে দিলে আমরা দেখি পাথরটি আগে এবং কাগজটি পরে নিচে এসে পড়ে। এটি ঘটে বাতাসের বাধার কারণে, বাতাসহীন একটি টিউবে এরকম পরীক্ষা করা হলে কাগজ এবং পাথর একই সময়ে নিচে এসে পড়ত। পড়ন্ত বস্তুর সূত্রগুলো থেকে গ্যালিলিওর প্রথম সুত্রটি বোঝা যায়। তার কারণ পড়ন্ত বস্তুর বেগ বা অতিক্রান্ত উচ্চতার সমীকরণগুলোতে কোথাও বস্তুর ভর নেই, অর্থাৎ ভারী এবং হালকা সব বস্তুর উপরেই মাধ্যাকর্ষণজনিত ত্বরণ সমানভাবে কাজ করে। কাজেই সমান সময়ে বেগ এবং অতিক্রান্ত দূরত্ব সমান।
গ্যালিলিওর দ্বিতীয় সূত্রটি g এর কারণে বেগ বৃদ্ধির সূত্র। আদি বেগ u শূন্য হলে বেগ v এর সাথে সমানুপাতিক। গ্যালিলিও এর তৃতীয় সূত্রটি অতিক্রান্ত উচ্চতা h এর সূত্রটি ছাড়া আর কিছু নয়। এই সূত্রটিতে u = 0 ধরে নেওয়া হলে আমরা দেখতে পাই অতিক্রান্ত উচ্চতা t2 এর সমানুপাতিক।